প্রশাসনিক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব দূর করার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেছেন, স্কুল-কলেজের দৈনন্দিন পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ শিক্ষাব্যবস্থায় গভীর বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। তিনি মনে করেন, এই ভুলগুলো সংশোধন করা এখন দেশের অন্যতম জরুরি কাজ।
রাজধানীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে দুই মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং নীতিনির্ধারকরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা জানান, শিক্ষার মান নিয়ে দীর্ঘদিনের উদ্বেগ কাটাতে বাস্তবসম্মত মূল্যায়ন ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। অভিভাবক ও শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই শিক্ষার মান কমে যাওয়ায় চিন্তিত। বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও基层 পর্যায়ের বাস্তব সমস্যাগুলো গভীরভাবে বোঝা জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়নে যেসব তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ভবিষ্যতের নীতিমালা তৈরিতে সরাসরি ভূমিকা রাখবে।
অধ্যাপক আবরার আরও জানান, আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার অবস্থান নির্ণয়ের জন্য সরকার একটি আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন কাঠামোর সদস্য হতে যাচ্ছে। তিনি মনে করেন, নিচের দিকে অবস্থান করলেও তা সমস্যা নয়—অন্তত জানা যাবে কোথায় ঘাটতি রয়েছে এবং কোন ক্ষেত্রগুলো ঠিক করা প্রয়োজন।
আগের সময়ে পরীক্ষা ছাড়াই ফল ঘোষণার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তিনি বলেন, পরীক্ষা না নিয়ে নম্বর দেওয়া ছিল একটি অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত। এটি শিক্ষাব্যবস্থাকে পিছিয়ে দিয়েছিল, এবং সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে সরকার কাজ করছে।
মূল্যায়নে দেখা গেছে—শিক্ষার্থীদের পাঠ-বোঝার সক্ষমতা ও গণিতে দক্ষতার ঘাটতি উল্লেখযোগ্য। এই দুর্বলতাগুলো আরও বিস্তৃতভাবে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কোচিং, প্রাইভেট টিউশন ও গাইড বইয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি বলেন, শুধু নিষেধাজ্ঞা দিলেই এগুলো বন্ধ হবে না। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কেন এসবের ওপর নির্ভর করেন—তা গভীরভাবে বোঝার প্রয়োজন। মূল সমস্যার জবাব খুঁজে পেলে সমাধান সহজ হবে।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার দুটি মূল্যায়ন পদ্ধতির সমন্বয় ভবিষ্যতে আরও কার্যকর হবে। খসরুজ্জামান আহমেদের নেতৃত্বে মাধ্যমিক শিক্ষার একটি বিস্তৃত মূল্যায়ন কার্যক্রমও চলছে।
গবেষকদের সঙ্গে পরবর্তী বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, গবেষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মন্ত্রণালয়ে এসে আরও বিস্তারিত বিশ্লেষণ উপস্থাপন করবেন। মন্ত্রণালয় সেসব বিষয় গভীর আগ্রহ নিয়ে পর্যালোচনা করবে।
উপসংহার
শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান সংকট কাটাতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন, বাস্তবসম্মত মূল্যায়ন এবং তথ্যভিত্তিক নীতিনির্ধারণ এখন সময়ের দাবি। শিক্ষার্থীদের মৌলিক দক্ষতা উন্নয়ন থেকে শুরু করে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার সংস্কার—সব ক্ষেত্রেই সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীলভাবে এগিয়ে এলে শিক্ষাব্যবস্থা পুনরায় স্থিতিশীল ও মানসম্মত পথে ফিরতে পারবে।
