রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিদের পোশাক নিয়ে শুরু হওয়া বিতর্কে এবার যুক্ত হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় শিক্ষক ও লেখক ড. আনা মান্নান। তাঁর এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্ট ঘিরে চলছে ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনা ও প্রশ্ন।
কী নিয়ে এই বিতর্ক?
সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হল সংসদের কয়েকজন নবনির্বাচিত ছাত্রনেতা তাঁদের অফিসিয়াল ফটোশুটে জিন্স ও টি-শার্ট পরিহিত অবস্থায় ছবি পোস্ট করেন। বিষয়টি নিয়ে একাংশের মন্তব্য — নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পোশাকের মাধ্যমে ‘শালীনতা ও দায়িত্ববোধ’ প্রকাশ করা উচিত।
তবে অন্যদিকে অনেকে বলছেন — ছাত্রনেতাদের পোশাক নয়, তাঁদের কাজ ও আচরণই আসল পরিচয়।
ড. আনা মান্নানের মন্তব্যে আলোড়ন
ড. মান্নান তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন:
“যে সমাজ এখনো পোশাক দিয়ে মানুষের যোগ্যতা মাপে, সে সমাজের উন্নয়ন থেমে থাকে। ছাত্রনেতাদের পোশাক নয়, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিবোধই হোক আলোচনার কেন্দ্র।”
তাঁর এই পোস্ট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। অনেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক তা সমর্থন জানালেও, কেউ কেউ সমালোচনা করেন বলে ‘অতিরিক্ত উদার’ অবস্থান নিচ্ছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, “ছাত্রনেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র। তাঁদের পোশাক-আচরণে সংযম ও ভারসাম্য থাকা জরুরি।”
তবে তাঁরা এটিও উল্লেখ করেছেন, কোনো নির্দিষ্ট পোশাকবিধি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই — তাই শালীনতার সীমা সামাজিকভাবে নির্ধারিত হওয়াই যুক্তিযুক্ত।
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
এক শিক্ষার্থী বলেন, “ছাত্রনেতা মানে দায়িত্বশীল মানুষ — কিন্তু দায়িত্বশীলতা মানে এই নয় যে, সবাইকে সাদা পাঞ্জাবি পরতেই হবে।”
আরেকজন যোগ করেন, “আমরা চাই নেতৃত্বে মানসিক পরিপক্বতা, বাহ্যিক প্রদর্শন নয়।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
ড. মান্নানের পোস্ট ঘিরে ফেসবুকে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ লিখেছেন —
“যে শিক্ষক মানবিক মূল্যবোধ শেখান, তিনিই আমাদের অনুপ্রেরণা।”
আবার কেউ বলছেন —
“বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান রক্ষা করা দায়িত্ব; সেই জায়গায় পোশাকও এক ধরণের প্রতিফলন।”
বিশ্লেষণ: বিতর্কের গভীরে কী আছে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিতর্ক আসলে সমাজের “বাহ্যিক বনাম অভ্যন্তরীণ মূল্যবোধের দ্বন্দ্ব” তুলে ধরেছে।
বাংলাদেশের মতো সমাজে এখনো পোশাক দিয়ে ব্যক্তির চরিত্র ও মর্যাদা বিচার করা হয়। কিন্তু নতুন প্রজন্ম প্রশ্ন তুলছে — কেন একজন শিক্ষিত, দায়িত্ববান মানুষকে তার পোশাকের ভিত্তিতে যাচাই করা হবে?
শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান
ড. মান্নান শেষ পোস্টে লেখেন,
“বিতর্ক হোক চিন্তার, নয় বিভাজনের। শিক্ষার্থীরা একে অপরকে সম্মান করলেই প্রকৃত শিক্ষা পূর্ণতা পাবে।”
উপসংহার
রাবির এই ঘটনাটি কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরকার বিতর্ক নয় — এটি সমাজের পরিবর্তিত মানসিকতার প্রতিফলন।
একদিকে ঐতিহ্য ও শালীনতার ভাবনা, অন্যদিকে স্বাধীন চিন্তা ও আধুনিক মূল্যবোধ।
সমঝোতার জায়গায় দাঁড়িয়ে হয়তো আমাদের বুঝতে হবে — পোশাক নয়, মানুষই আসল পরিচয়।
