কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকশ কেজি সরকারি বই বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনা সরকারি নির্দেশনা ছাড়াই ঘটে, যা অনুষ্ঠিত হয় উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের নির্দেশে। তিনি বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
ঘটনাটি ১৬ অক্টোবর ঘটলেও সম্প্রতি বিষয়টি জনসমক্ষে আসে। সূত্র জানায়, ইটনা সদর ইউনিয়নের পূর্বগ্রাম মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে কয়েক বছরের পুরনো বই সংরক্ষিত ছিল। ওই দিন বইগুলি কিনে নেন ইটনা বড়বাজারের ভাঙারি ব্যবসায়ী সালমান।
বই বিক্রির সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহায়ক মো. রিয়াজ উদ্দিন। তিনি বলেন, “নতুন বই আসবে, তাই পুরনো ১৫০ কেজি বই বিক্রি করতে বলেছেন স্যার (শফিকুল ইসলাম)। আমি একবার বই বিক্রির সময় সেখানে গিয়েছিলাম।”
বড়বাজারের ভাঙারি দোকানি সালমান বই কেনার বিষয়টি স্বীকার করলেও কত কেজি এবং কোন দামে কিনেছেন তা নিশ্চিত করতে পারেননি।
পূর্বগ্রাম মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বইগুলি ভ্যান দিয়ে খাদ্যগুদামের ঘাটে আনা হয়। চালক সজীব মিয়া বলেন, “আমি শুধু ভ্যান দিয়ে বই নিয়ে আসি। তারপর নৌকায় কোথায় নিয়ে গেছে তা জানি না।” তিনি উল্লেখ করেন, ১০–১২ বস্তা বই বহন করেছেন।
তবে ইটনা থেকে নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় যোগদান করা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন জানান, বিদ্যালয়ের কক্ষে কয়েক বছরের পুরনো বই ছিল। তাঁর হিসাব অনুযায়ী ৯০০–১,০০০ কেজি বই ছিল, যা এখন ২০০–৩০০ কেজি অবশিষ্ট আছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বই বিক্রির বিষয়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, নষ্ট বই ফেলে দেওয়া হয়েছে এবং কিছু বই বিক্রি করা হয়েছে। তবে সরকারি নির্দেশনা ছিল কিনা, তা জানাননি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজিব আলম বলেন, তিনি যোগদানের পরেই সরকারি বই বিক্রি করেছেন। এটি একটি গুরুতর অপরাধ। প্রয়োজন হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ’s)
কিশোরগঞ্জের ইটনায় সরকারি বই কেজি দরে বিক্রির ঘটনা কখন ঘটেছে?
ঘটনা ঘটেছে ১৬ অক্টোবর, তবে সম্প্রতি এটি জনসমক্ষে এসেছে।
সরকারি বই বিক্রির নির্দেশ দিয়েছেন কে?
উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, যিনি বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
কত কেজি সরকারি বই বিক্রি হয়েছে?
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে প্রায় ১৫০ কেজি বই বিক্রি করা হয়েছে।
বই বিক্রির সময় উপস্থিত ছিলেন কি কেউ?
হ্যাঁ, উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহায়ক মো. রিয়াজ উদ্দিন।
বইটি কে কিনেছেন?
ইটনা বড়বাজারের ভাঙারি ব্যবসায়ী সালমান বইটি কিনেছেন।
বইগুলি কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল?
বিদ্যালয় থেকে ভ্যানের মাধ্যমে খাদ্যগুদামের ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং তারপর নৌকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
বই বিক্রি কি সরকারি নির্দেশনার আওতায় ছিল?
বই বিক্রির জন্য সরকারি কোনো নির্দেশনা ছিল কি না, তা নিশ্চিত করা যায়নি।
উপসংহার
কিশোরগঞ্জের ইটনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকশ কেজি সরকারি বই বিক্রির ঘটনা শিক্ষা বিভাগের নিয়ম-নীতি লঙ্ঘনের একটি গুরুতর উদাহরণ। সরকারি নির্দেশনা ছাড়া বই বিক্রি হওয়া এবং প্রয়োজনীয় নজরদারি না থাকায় এই ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এটি প্রমাণ করে যে, বিদ্যালয় ও প্রশাসনিক স্তরে আরও শক্তিশালী তদারকি এবং স্বচ্ছ নীতি প্রয়োগের প্রয়োজন। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন যদি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
