পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফার নির্দেশে দুই শিক্ষার্থীসহ পাঁচ তরুণের মাথা ন্যাড়া করা হয়েছে। অভিযোগ, রবিবার সকাল ১০টার দিকে মধ্য চতলাখালী গ্রামের খুতির বাজারে প্রায় শতাধিক মানুষের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত রেশাদ খলিফা, ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, তার সিদ্ধান্তেই এই ‘শাস্তি’ কার্যকর করা হয়েছে। ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, রেশাদ খলিফা লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে নাপিতকে নির্দেশ দিচ্ছেন, এবং যুবকদের মাথা ন্যাড়া করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে চুল পড়ে থাকা অবস্থা প্রত্যক্ষ করা গেছে।
মধ্য চতলাখালী গ্রামের মনির গোলদার ও মোজাম্মেল মৃধার মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। শুক্রবার দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এরপর শনিবার রাতে মনিরের ছেলে রাব্বি ও মোজাম্মেলের ছেলে রিয়ান তর্কে জড়িয়ে পড়েন। রিয়ানের মারধরের অভিযোগ তার বাবা মোজাম্মেল স্থানীয় ইউপি সদস্যকে জানান।
রবিবার সকালে ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে সালিশ বসে। দুই পক্ষ ও স্থানীয়দের উপস্থিতিতে পাঁচ তরুণকে ‘বখাটে’ আখ্যা দিয়ে মাথা ন্যাড়া করার নির্দেশ দেন রেশাদ খলিফা। নাপিতকে ডেকে এনে নিজেই উপস্থিত থেকে মাথা ন্যাড়া করান।
মাথা ন্যাড়া হওয়া তরুণরা হলেন:
- রাব্বি, ১৮ বছর, কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র
- রিয়ান, ২১ বছর, গৃহস্থালি কর্মী
- রাতুল, ১৭ বছর, মাদরাসার দশম শ্রেণীর ছাত্র
- শাকিল, ১৯ বছর, গৃহস্থালি শ্রমিক
- নয়ন সরদার, ১৮ বছর, রাজমিস্ত্রির সহকারী
ভুক্তভোগী নয়ন সরদার অভিযোগ করেছেন, তারা শুধু মারামারি থামাতে গিয়েছিলেন। তার মা ঝর্ণা বেগম কান্নায় ভেঙে বলেন, “আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি, তবুও মেম্বার তার মাথা কেটে দিয়েছেন।” রাব্বিও জানিয়েছেন, তার সঙ্গে রিয়ানের মারামারি হয়েছে, কিন্তু অন্য তিনজনও নির্বিচারে শাস্তির শিকার হয়েছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, জমিজমা বিরোধকে কেন্দ্র করে যুবকদের মারামারি হয়েছে, কিন্তু সালিশের নামে এমন ‘শাস্তি’ সম্পূর্ণ অবৈধ। ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি জানি না, আমি সেখানে ছিলাম না।”
গ্রাম আদালতের উপজেলা কো-অর্ডিনেটর মো. ইমাম হোসেন সায়েম বলেন, “ইউপি সদস্যের এমন ক্ষমতা নেই। এটি সম্পূর্ণ আইনবিরুদ্ধ।” রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীম হাওলাদার এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব দাশ জানিয়েছেন, ঘটনার খোঁজ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু তাহের মন্তব্য করেছেন, “এটি মানুষের অপমান এবং প্রচলিত আইনের পরিপন্থী অপরাধ।”
এ ঘটনার পর এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। পরিবারগুলো লজ্জা ও আতঙ্কে ভেঙে পড়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, আইন রক্ষার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাই যদি আইনের বাইরে গিয়ে মানুষকে অপমান করেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় ন্যায়বিচার চাইবে?
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ’s)
সালিশে শিক্ষার্থীসহ ৫ জনের মাথা ন্যাড়া কাণ্ড কোথায় ঘটেছে?
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের মধ্য চতলাখালী গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে।
এই কাণ্ডের অভিযোগে কার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে?
স্থানীয় ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফা-এর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
মাথা ন্যাড়া হওয়া ভুক্তভোগীদের মধ্যে শিক্ষার্থীরা কাদের অন্তর্ভুক্ত?
রাতুল (১৭ বছর, মাদরাসার দশম শ্রেণীর ছাত্র) এবং রাব্বি (১৮ বছর, কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র) শিক্ষার্থী ছিলেন।
কি কারণে এই সালিশ বসানো হয়েছিল?
মনির গোলদার ও মোজাম্মেল মৃধার মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ এবং তাদের ছেলেদের মধ্যে মারামারি হওয়ায় ইউপি সদস্য সালিশ বসিয়েছিলেন।
ভুক্তভোগীদের মাথা কেটে দেয়ার নির্দেশ কে দিয়েছিল?
অভিযোগ অনুযায়ী, ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফা নিজে উপস্থিত থেকে নাপিতকে নির্দেশ দেন।
এই ঘটনার ভিডিও বা প্রমাণ কি পাওয়া গেছে?
হ্যাঁ, স্থানীয়রা একটি ভিডিও হাতে পেয়েছেন যেখানে নাপিতকে নির্দেশ দিয়ে যুবকদের মাথা ন্যাড়া করানো হচ্ছে।
স্থানীয়রা এই ঘটনায় কী প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন?
এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ ও চাঞ্চল্যগ্রস্ত। অনেক পরিবার লজ্জা ও আতঙ্কে ভেঙে পড়েছেন।
উপসংহার
রাঙ্গাবালীর ছোটবাইশদিয়ায় সালিশের নামে শিক্ষার্থীসহ পাঁচ তরুণের মাথা ন্যাড়া করা কাণ্ড স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। ঘটনায় অভিযুক্ত ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফা-এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। আইন এবং মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি সম্পূর্ণ অবৈধ ও নিন্দনীয় কার্যকলাপ। স্থানীয় প্রশাসন ইতোমধ্যেই ঘটনার সত্যতা যাচাই করছে এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেবে।
