আওয়ামী লীগের আমলে দেশের অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভুয়া সনদধারী শিক্ষকে ভরে গিয়েছিল। শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র প্রিন্ট জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তা ধারাবাহিকভাবে হাজারো জাল শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করলে বিষয়টি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। পরবর্তীতে অনেকে চাকরি হারান, কেউ আত্মগোপনে যান, আবার কেউ সম্মান রক্ষায় স্বেচ্ছায় শিক্ষকতা ছেড়ে দেন।
তবে একদল শিক্ষক হাল ছাড়েননি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সুযোগে তারা কিছু বেসরকারি শিক্ষক নেতা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করে চাকরি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা শুরু করেন। ধীরে ধীরে তাদের প্রচেষ্টা ফল দিতে শুরু করে।
সরকারি সূত্রে জানা যায়, বৈধ প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন সনদ অর্জনের শর্তে এসব ভুয়া শিক্ষক বৈধ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই ১৩৮ জন জাল শিক্ষককে তিনটি শর্তে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে, যার মধ্যে সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষক ও কম্পিউটার শিক্ষকও রয়েছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১২৩ জন কম্পিউটার শিক্ষক, প্রভাষক ও প্রদর্শক, এবং ১৫ জন সাচিবিক বিদ্যা ও অফিস ব্যবস্থাপনা বিষয়ের শিক্ষককে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
তুমি এটা পছন্দ করো: বাউবিতে HSC পরীক্ষার ফলাফল ২০২৫ প্রকাশ | ফলাফল দেখুন এখনই
তাদের শর্ত হলো — তিন বছরের মধ্যে বৈধ সনদ অর্জন করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে নিয়োগকালীন যোগ্যতার ঘাটতি পূরণ করলে তাদের চাকরি বহাল থাকবে।
২০২৩ সালের ১৮ মে প্রকাশিত তালিকায় ৬৭৮ জন অননুমোদিত বা জাল সনদধারী শিক্ষক চিহ্নিত হন। এদের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই শেষে ১৩৮ জনকে আপাতত অভিযোগমুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, সাচিবিক বিদ্যা ও অফিস ব্যবস্থাপনা বিষয় বর্তমানে পাঠ্যক্রমে না থাকায় তাদের প্রশিক্ষণ সনদের প্রাসঙ্গিকতা নেই, ফলে অভিযোগ থেকেও তাদের মুক্তি দেয়া হয়েছে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আবেদনকারীরা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা করছেন, প্রশিক্ষণে অদক্ষতার কোনো অভিযোগ নেই, তবে তাদের সনদ অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের নয়। যেহেতু তারা আগে থেকেই এমপিওভুক্ত ছিলেন, তাই নতুন সনদ অর্জনের শর্তে তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষাঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। কেউ এটিকে ‘সংশোধনের সুযোগ’ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ বলছেন এটি ‘জালিয়াতির বৈধতা’ দেওয়ার দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।
শিক্ষা সম্পর্কিত সর্বশেষ খবর, বিশ্লেষণ ও আপডেট পেতে “দৈনিক আমাদের বার্তা”র ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল আইকন ক্লিক করুন — যাতে আপনার ফোন বা কম্পিউটারে সব নতুন ভিডিওর নোটিফিকেশন পৌঁছে যায়।
প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ’s)
এই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কী ধরনের অভিযোগ ছিল?
অভিযোগ ছিল, তারা অননুমোদিত বা জাল সনদ ব্যবহার করে শিক্ষকতা করছিলেন।
কোন শর্তে তাদের বৈধতার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে?
তিন বছরের মধ্যে বৈধ প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমোদিত সনদ অর্জন করার শর্তে তাদের অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের আওতায় কোন কোন বিষয় অন্তর্ভুক্ত?
মূলত কম্পিউটার, সাচিবিক বিদ্যা ও অফিস ব্যবস্থাপনা বিষয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা এই সুযোগ পাচ্ছেন।
এদের মধ্যে কয়জন কম্পিউটার শিক্ষক আছেন?
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১২৩ জন কম্পিউটার শিক্ষক, প্রভাষক ও প্রদর্শক এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছেন।
এ সিদ্ধান্তে কি সবাইকে চাকরিতে বহাল রাখা হবে?
যারা নির্ধারিত সময়ে বৈধ সনদ অর্জন করবেন, তারাই চাকরিতে বহাল থাকবেন। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
এই সিদ্ধান্তের আইনি ভিত্তি কী?
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে প্রেরিত অফিসিয়াল চিঠির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তকে কি বিতর্কিত বলা হচ্ছে?
হ্যাঁ, শিক্ষা অঙ্গনের অনেকেই মনে করছেন এটি ‘জালিয়াতিকে বৈধতা দেওয়ার উদাহরণ’, আবার অনেকে বলছেন এটি ‘সংশোধনের সুযোগ’।
উপসংহার
সরকারের সিদ্ধান্তে ১৩৮ ভুয়া শিক্ষককে বৈধতার সুযোগ দেওয়া শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ এটিকে মানবিক উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন—যেখানে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করা ব্যক্তিদের সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে অনেকেই মনে করছেন, এটি শিক্ষা ব্যবস্থার সততা ও মানদণ্ডে প্রশ্ন তুলতে পারে।
