জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ফজিলতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলামের বাসায় কাজ করতে অস্বীকার করায় তিনজন হল কর্মচারীর চাকরিচ্যুতির অভিযোগ উঠেছে। তারা গত দেড় বছর ধরে হলের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
ভুক্তভোগী কর্মচারীরা সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) জানান, কোনো কারণ না জানিয়ে তাদের চাকরি শেষ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করতে অস্বীকার করার কারণে তাদের বাদ দিয়ে নতুন কর্মচারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী তিনজন হলেন:
- ডাইনিং এটেন্ডেন্ট (মহিলা) মিরা রানী রায়
- ডাইনিং এটেন্ডেন্ট চম্পা
- পরিচ্ছন্নতা কর্মী (মহিলা) মোছা সোমা
তারা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে গত দুই বছর ধরে হলের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সম্প্রতি তাদের পদে নতুনভাবে সিতা রানী, রহিমা আক্তার এবং সুমা বেগমকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, “হলে মোট ১২ জন কর্মী কাজ করি। হঠাৎ আমাদের বলা হলো, হলের কাজ করতে যেন না আসি। কারণ জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি। পরে জানতে পারি, আমাদের বাদ দিয়ে প্রাধ্যক্ষের বাসার কর্মচারীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আমরা দু’জন ডাইনিংয়ে এবং একজন ক্লিনার হিসেবে কাজ করতাম এবং ২০২৩ সাল থেকে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু এখন আমাদের জীবিকা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।”
তারা আরও বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রাধ্যক্ষ হওয়ার পর থেকে আমাদের হলের কাজের পাশাপাশি তার বাসায় আনুষঙ্গিক কাজের চাপ দেওয়া হয়। আমরা তা অস্বীকার করি। পূর্বে এ বিষয়ে এক সমাধানও হয়, কিন্তু আবার আমাদের চাকরিচ্যুত করা হলো।”
অন্যদিকে প্রাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা তাদের বরখাস্ত করি নি। বিষয়টি কোম্পানির এখতিয়ার। আমাদের শুধু ক্লিনার ও বাথরুম সুইপার প্রয়োজন ছিল। যারা এই কাজ করতে রাজি ছিল না, তাদের পরিবর্তন করেছে কোম্পানি। আমার বাসায় তারা কখনো কাজ করেনি। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা লিখিতভাবে জানাবে যে তারা সুইপারের কাজও করবেন।”
তিনি আরও বলেন, “ডাইনিংয়ের জন্য নতুন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে যারা সুইপারের কাজ করতে রাজি হয়নি, তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।”
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ’s)
কেন তিনজন কর্মচারী ফজিলতুন্নেসা হল থেকে বরখাস্ত হন?
তাদের অভিযোগ অনুযায়ী, প্রাধ্যক্ষের ব্যক্তিগত কাজে না রাজি হওয়ায় তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
বরখাস্তকৃত কর্মচারীরা কোন পদে কর্মরত ছিলেন?
মিরা রানী রায় ও চম্পা ডাইনিং এটেন্ডেন্ট হিসেবে এবং মোছা সোমা পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তারা কত সময় ধরে হলের কাজে নিযুক্ত ছিলেন?
প্রায় দেড় বছর ধরে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে হলের কাজে নিযুক্ত ছিলেন।
নতুন কর্মচারীদের নিয়োগ কবে এবং কারা করা হয়েছে?
গত রবিবার সিতা রানী, রহিমা আক্তার এবং সুমা বেগমকে নতুনভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
প্রাধ্যক্ষ কি বরখাস্তের জন্য দায়ী?
প্রাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম বলছেন, বরখাস্তের সিদ্ধান্তটি কোম্পানির এখতিয়ারে হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, বাসার কাজে রাজি না হওয়ার কারণে কোম্পানি পরিবর্তন করেছে।
বরখাস্তকৃতরা কি প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করতে অস্বীকার করেছিলেন?
হ্যাঁ, তারা প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করতে অস্বীকার করেছিলেন।
তারা কোন কোম্পানির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন?
তারা ‘ওয়ার্ল্ড সিকিউরিটি কোম্পানি’ এর মাধ্যমে আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।
উপসংহার
ফজিলতুন্নেসা হলের তিনজন কর্মচারীর চাকরিচ্যুতির ঘটনা প্রমাণ করে, কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত কাজে চাপ ও আউটসোর্সিং নিয়োগ নীতি কখনো কখনো বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও প্রাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম দাবি করেছেন যে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কোম্পানির এখতিয়ারে হয়েছে, ভুক্তভোগী কর্মচারীরা মনে করেন তাদের নির্ভরযোগ্য কর্মজীবনকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়, কর্মচারীর অধিকার, স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা মেনে চলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
