সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) হাতে থাকায় প্রশ্নফাঁস, ঘুষ লেনদেন ও তদবিরসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষকদের বক্তব্য, এমন দুর্নীতি এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়। এবার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অশিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগও ডিসিদের হাতে দেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে হলে তাদের দাবিকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। দীর্ঘদিন ধরে তারা দাবি করছেন, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগের মতোই কর্মচারী নিয়োগের দায়িত্ব এনটিআরসিএর হাতে থাকা উচিত। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই দাবি উপেক্ষা করেছে।
গত সোমবার প্রকাশিত পরিপত্রে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ছাড়া অন্যান্য এমপিও পদে নিয়োগ সুপারিশের দায়িত্ব ডিসিদের হাতে দেয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি কর্মচারী নিয়োগের কর্তৃত্ব হারিয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী নিয়োগে প্রতি প্রার্থী ৪ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন ও ঘুষ হয়ে আসছে। এ ঘুষের বাটোয়ারা বেসরকারি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। নতুন নিয়ম অনুযায়ী ডিসির নেতৃত্বাধীন কমিটি এই নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করবে। কমিটিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ও সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ থাকবেন।
আরও পড়ুন: উচ্চ মাধ্যমিকে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি ও আলোচনা
শিক্ষক নেতারা বলছেন, বহুদিন ধরে তাদের দাবি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান নিয়োগও এনটিআরসিএর হাতে দেওয়ার। ৫ আগস্টের পর এই দাবি জোরালো হলেও প্রশাসন এখনও তা মেনে নি।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, নিয়োগ সুপারিশ কমিটি পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল প্রস্তুত ও নিয়োগ সুপারিশ করবে। প্রয়োজনে মৌখিক পরীক্ষার জন্য একাধিক বোর্ড গঠন করা যাবে। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট বোর্ড গঠিত হবে।
শিক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, ডিসির ওপর আস্থা থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাব সামলাতে সকল ডিসি সক্ষম হবেন কি না, তা সন্দেহজনক। এমপিওভুক্ত এই শিক্ষকরা মনে করছেন, বর্তমান নিয়মে নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ হচ্ছে না, বরং নতুন প্রক্রিয়ায় কোটি কোটি টাকার লেনদেন ও মামলা-হামলার সম্ভাবনা বেশি।
যদি এ দায়িত্ব এনটিআরসিএর হাতে থাকতো, তা হলে দুর্নীতি, হানাহানি ও মামলা-হামলা কমে যেত। অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের চেষ্টা করাও কমত।
পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, ম্যানেজিং কমিটি বা গর্ভনিং বডি নিয়োগ সুপারিশ কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী কর্মীদের নিয়োগপত্র ইস্যু করবে। সব কাগজপত্র স্থায়ীভাবে উপজেলা শিক্ষা অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ করবে। প্রয়োজনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত গণ্য হবে।
বর্তমানে সারাদেশে ৩২ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে ৫ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা পান। এছাড়াও খণ্ডকালীন ও ননএমপিও শিক্ষকদের সংখ্যা কয়েক লাখ।
শিক্ষা সংক্রান্ত সব খবর জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং নতুন ভিডিওর নোটিফিকেশন পেতে বেল বাটন ক্লিক করুন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ’s)
বেসরকারি স্কুলে আয়া ও নাইটগার্ড নিয়োগ ডিসিদের হাতে দেওয়ার কারণ কী?
প্রশাসন বলছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে এবং দূর্নীতি কমাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া কখন থেকে কার্যকর হবে?
পরিপত্র অনুযায়ী, গত সোমবার থেকে ডিসিদের নেতৃত্বে নিয়োগ সুপারিশ কমিটি কার্যক্রম শুরু করেছে।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ডিসি ছাড়া আর কারা থাকবেন?
কমিটিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ও সরকারি কলেজের পুরাতন অধ্যক্ষ থাকবেন।
কর্মচারী নিয়োগে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির ভূমিকা কি থাকবে না?
নতুন নিয়মে ম্যানেজিং কমিটি বা গর্ভনিং বডি নিয়োগে সুপারিশ করতে পারবে, কিন্তু প্রাথমিক নিয়োগের কর্তৃত্ব ডিসির কমিটির হাতে থাকবে।
এই পরিবর্তনের ফলে ঘুষ ও অনিয়ম কি কমবে?
সরকারি আশ্বাস অনুযায়ী দূর্নীতি কমানো হবে, তবে শিক্ষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কিছু সমস্যা থেকে যেতে পারে।
এনটিআরসিএর ভূমিকা কি থাকবে না?
প্রবেশ পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসিএর দায়িত্ব থাকবে, কিন্তু আয়া ও নাইটগার্ড নিয়োগে এনটিআরসিএর প্রাথমিক ভূমিকা থাকবে না।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আবেদনকারী কীভাবে অবহিত হবে?
নিয়োগ সুপারিশ কমিটি সুপারিশ পাঠালে, ম্যানেজিং কমিটি রেজিস্টার্ড ডাক এবং মোবাইলে বিজ্ঞপ্তি দেবে।
উপসংহার
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আয়া ও নাইটগার্ড নিয়োগ ডিসিদের হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদিও এটি দূর্নীতি কমানো এবং প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্য রাখে, শিক্ষকদের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে যে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সব ডিসি সমানভাবে কার্যকর হবেন না। তাই সতর্ক নজরদারি ও নিয়মাবলী কঠোরভাবে অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। এই পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নিয়োগে নিয়ম ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
