উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে লিখিত আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। দেশের বিশিষ্ট ইসলামী স্কলারদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ ইসলামিক স্টাডিজ ফোরাম সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ শুরু করেছে।
সূত্র জানায়, ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ১০০ নম্বরের ইসলাম বা ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য ফোরামের পক্ষ থেকে জোরালো দাবি তোলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ইসলামিক স্টাডিজ ফোরামের সভাপতি ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আবদুর রাহীম বলেন—
“চলতি শিক্ষাবর্ষে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ভর্তি নীতিমালা ও বিষয় কাঠামোয় ইসলাম শিক্ষা এখনো ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবেই রাখা হয়েছে। আমরা মনে করি, এটি ধর্মপ্রাণ জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের সুযোগ বাধ্যতামূলকভাবে নিশ্চিত করা জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, ইসলাম শিক্ষা শুধু মানবিক বিভাগেই নয়, বরং বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগেও আবশ্যিক করা উচিত। এতে শিক্ষার্থীরা ধর্মকে জানার পাশাপাশি সঠিকভাবে বোঝার সুযোগ পাবে।
ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
শিক্ষাবিদরা মনে করেন, শুধুমাত্র বস্তুগত বিদ্যা আলোকিত মানুষ তৈরি করতে পারে না। সমাজ উন্নয়নের জন্য নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। নৈতিক শিক্ষার প্রধান উৎস ধর্মীয় শিক্ষা হওয়ায় শিক্ষাব্যবস্থায় এটি বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের দাবি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুর্গাপূজা ছুটি ভারতের তুলনায় বেশি
প্রাথমিক স্তরে ধর্মীয় শিক্ষার ঘাটতি
ড. আবদুর রাহীম জানান, বাংলাদেশের মতো মুসলিম প্রধান দেশে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষা যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। শিশু শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ইসলাম শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ইসলাম শিক্ষা থাকলেও প্রশিক্ষিত বা যোগ্য শিক্ষক সংকট স্পষ্ট। অনেক স্কুলে অমুসলিম শিক্ষক দিয়ে ইসলাম শিক্ষা করানোর অভিযোগও রয়েছে।
এছাড়া, কিন্ডারগার্টেন, ইংলিশ মিডিয়াম এবং এনজিও পরিচালিত অসংখ্য স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই।
মাউশির প্রতিক্রিয়া
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আজাদ খান জানিয়েছেন,
“বাংলাদেশ ইসলামিক স্টাডিজ ফোরামের পক্ষ থেকে একটি চিঠি আমরা পেয়েছি। বিষয়টি ন্যাশনাল কারিকুলাম কো-অর্ডিনেশন কমিটিতে (এনসিসিসি) পাঠানো হবে। সেখানে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ’s)
উচ্চ মাধ্যমিকে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কেন উঠেছে?
ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা সমাজে মূল্যবোধ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় জ্ঞান নিশ্চিত করার জন্য এই দাবি উঠেছে।
কখন থেকে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে?
বাংলাদেশ ইসলামিক স্টাডিজ ফোরামের পক্ষ থেকে ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকেই এটি বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিকে ইসলাম শিক্ষা কীভাবে পড়ানো হয়?
বর্তমানে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ইসলাম শিক্ষা মানবিক বিভাগে ঐচ্ছিক চতুর্থ বিষয় হিসেবে রয়েছে।
বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগেও কি ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি উঠেছে?
হ্যাঁ, প্রস্তাবে বলা হয়েছে সব বিভাগেই ইসলাম বা ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত।
কারা এই দাবি জানিয়েছে?
বাংলাদেশের বিশিষ্ট ইসলামী স্কলারদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ ইসলামিক স্টাডিজ ফোরাম এই দাবি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবস্থান কী?
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিষয়টি ন্যাশনাল কারিকুলাম কো-অর্ডিনেশন কমিটি (NCCC) তে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রাথমিক স্তরে ধর্মীয় শিক্ষার অবস্থা কেমন?
শিশু শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ইসলাম শিক্ষা নেই। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ইসলাম শিক্ষা থাকলেও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের সংকট রয়েছে।
উপসংহার
উচ্চ মাধ্যমিকে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি শুধুমাত্র শিক্ষাব্যবস্থার একটি সংশোধন নয়, এটি শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় জ্ঞান বৃদ্ধির এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কেবল ধর্মের প্রাথমিক ধারণাই নয়, বরং নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ববোধও অর্জন করতে পারবে। প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সমন্বিত ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করলে, শিক্ষাব্যবস্থা হবে আরও সমৃদ্ধ ও সমাজ হবে নৈতিকভাবে দৃঢ়।
