শরীয়তবিরোধী উল্লেখ করে দুর্গাপূজার ছুটি বাতিলের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছেন কয়েকজন মাদরাসা শিক্ষক ও অভিভাবক। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) তারা মাদরাসায় দুর্গাপূজার ছুটি বাতিলের জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দেন।
একই দাবিতে সেদিন দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
মাদরাসায় নির্ধারিত ছুটি
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো মাদরাসাগুলোও ছুটি পাবে। শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ক্লাস বন্ধ থাকবে। এর মধ্যে ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহমের ছুটিও যুক্ত রয়েছে।
আবেদনের বিষয়বস্তু
চিঠিতে বলা হয়, পূর্ববর্তী সরকার আলিয়া মাদরাসার ওপর ইসলামবিরোধী কিছু সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম হলো ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসবের ছুটি মাদরাসার পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা। তারা দাবি করেন, মাদরাসায় ভিন্ন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী নেই, তাই এ ধরনের ছুটি অমূলক এবং শরীয়তবিরোধী।
তাদের মতে, যদি কোনো শিক্ষক ভিন্ন ধর্মের হয়ে থাকেন তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে তার ধর্মীয় ছুটি ভোগ করতে পারবেন, এতে কোনো আপত্তি নেই। তবে সব শিক্ষার্থীর জন্য এ সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া অন্যায্য।
সইকারীরা
আবেদনে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে স্বাক্ষর করেন সিরাজগঞ্জের আল-ফারুক ক্যাডেট মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন।
অভিভাবক প্রতিনিধি হিসেবে স্বাক্ষর করেন তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার আলিম প্রথমবর্ষ শিক্ষার্থীর অভিভাবক জুবায়ের আহমেদ এবং শেখ সাদ বিন জাহান।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ’s)
মাদরাসায় দুর্গাপূজার ছুটি বাতিলের দাবি কেন করা হলো?
মাদরাসার শিক্ষক ও অভিভাবকরা মনে করেন, মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ওপর ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় ছুটি চাপানো শরীয়তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই তারা ছুটি বাতিলের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দেন।
কোন মাদরাসার শিক্ষক ও অভিভাবকরা চিঠি দেন?
শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন সিরাজগঞ্জের আল-ফারুক ক্যাডেট মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন। অভিভাবক প্রতিনিধি হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন জুবায়ের আহমেদ ও শেখ সাদ বিন জাহান।
চিঠি কবে জমা দেওয়া হয়?
চিঠি জমা দেওয়া হয় ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সালে।
মাদরাসার ছুটি কখন নির্ধারিত ছিল?
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি নির্ধারিত।
ছুটি বাতিলের দাবির পেছনে মূল কারণ কী?
মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নেই, তাই অন্য ধর্মের উৎসবের ছুটি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় নয় এবং এটি শরীয়তের বিরুদ্ধে ধরা হয়েছে।
কি ধরনের প্রতিবাদ করা হয়েছে?
একই দাবিতে ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মানববন্ধন করেন।
শিক্ষার্থীরা কি ভিন্ন ধর্মীয় ছুটি ভোগ করতে পারবে?
যদি কোনো শিক্ষক ভিন্ন ধর্মের হন, তবে তিনি তার ব্যক্তিগত ধর্মীয় ছুটি ভোগ করতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের ওপর চাপানো ছুটি বাতিলের দাবি করা হয়েছে।
উপসংহার
মাদরাসার শিক্ষক ও অভিভাবকদের চিঠি এবং মানববন্ধনের মাধ্যমে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, ভিন্ন ধর্মীয় ছুটি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় নয় এবং এটি শরীয়তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা চাইছেন মাদরাসার পাঠ্যক্রম ও ছুটি নির্ধারণ সম্পূর্ণ ইসলামী নীতি অনুযায়ী হোক। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকলেও, মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ছুটি বাতিলের দাবিটি এখন গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের বিষয় হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে।
