ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজের প্রস্তাবিত কাঠামোয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে তারা ঢাকা কলেজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ বাস্তবায়িত হলে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষায় অস্তিত্বসংকট দেখা দিতে পারে। তাই তারা পূর্ণাঙ্গ সমাধানের লক্ষ্যে এই মানববন্ধন করেছেন।
এর আগে, সোমবার শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কলেজের ১৮৪ বছরের ঐতিহ্য বিবেচনায় বিদ্যমান একাডেমিক কাঠামোর কোনো পরিবর্তন যা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তা তারা মেনে নেবেন না। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেন।
শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
এর আগে, গত বুধবার এসব কলেজের কয়েকশ শিক্ষকরাও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সামনে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি জমা দেন। তারা প্রস্তাবিত কাঠামো বাস্তবায়িত হলে কলেজগুলোর শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ, শিক্ষক পদ এবং নারী শিক্ষার সুযোগের উপর প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামো অনুযায়ী, সাতটি কলেজকে চারটি স্কুলে বিভক্ত করা হবে। স্কুল অব সায়েন্সের জন্য ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা কলেজ; স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিসের জন্য সরকারি বাঙলা কলেজ; স্কুল অব বিজনেসের জন্য সরকারি তিতুমীর কলেজ; এবং স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিসের জন্য কবি নজরুল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ নির্ধারিত হয়েছে। ৪০% ক্লাস অনলাইনে এবং ৬০% ক্লাস সশরীরে হবে, তবে সব পরীক্ষা সশরীরে অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা বলেছেন, টাইম শেয়ারিং পদ্ধতিতে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উচ্চমাধ্যমিক ক্লাস নেওয়া এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস নেওয়া বাস্তবসম্মত হবে কি না, তা নিয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ’s)
উচ্চমাধ্যমিকে কোন ধরনের পরিবর্তন ক্ষতিকর হতে পারে?
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার মান কমানো, পাঠ্যক্রম হঠাৎ পরিবর্তন, বা শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ সীমিত করা ক্ষতিকর হতে পারে।
কেন শিক্ষার্থীরা এসব পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সতর্ক?
কারণ এ ধরনের পরিবর্তন তাদের শিক্ষাগত ভবিষ্যৎ, কলেজের ঐতিহ্য এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার মানকে প্রভাবিত করতে পারে।
কলেজের ঐতিহ্য ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার সম্পর্ক কী?
কলেজের দীর্ঘ ঐতিহ্য শিক্ষার মান, পাঠ্যক্রমের গঠন এবং ছাত্রছাত্রীদের আস্থাকে সমর্থন করে। ঐতিহ্য রক্ষা শিক্ষার্থীদের স্থিতিশীল শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করে।
নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব কীভাবে উচ্চমাধ্যমিককে প্রভাবিত করতে পারে?
নতুন বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামোতে কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ক্লাস সংখ্যা কমে যেতে পারে, সময়সূচি জটিল হতে পারে এবং সেশন শেয়ারিং সমস্যা তৈরি হতে পারে।
শিক্ষার্থীরা কি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে?
না, শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে নয়। তারা কেবল উচ্চমাধ্যমিকের ক্ষতি হওয়া এড়াতে সতর্ক।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে শিক্ষার্থীরা কী অনুরোধ করেছে?
শিক্ষার্থীরা কলেজগুলোর একাডেমিক কাঠামো এমনভাবে পরিবর্তনের বিরুদ্ধে অনুরোধ করেছেন যাতে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার মান বজায় থাকে।
শিক্ষকরা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
শিক্ষকরা মানববন্ধন করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়ে প্রস্তাবিত কাঠামোর বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছেন।
উপসংহার
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার মান রক্ষা করা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তাবিত পরিবর্তন বা নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠন এমনভাবে করা উচিত যাতে কলেজের ঐতিহ্য, শিক্ষার মান এবং শিক্ষার্থীর স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। শিক্ষার্থীদের সচেতনতা ও মানববন্ধনের মতো উদ্যোগই এই ধরনের পরিবর্তনে সতর্কতা আনতে সহায়ক। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই উদ্বেগগুলোকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাকে শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল রাখবে।