গত ২১ বছর ধরে ডিগ্রি পর্যায়ে শিক্ষা দিচ্ছে পাবনা সিটি কলেজ। তবে ৩১ জুলাই প্রকাশিত একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কলেজকে হঠাৎ উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাতীয় একটি দৈনিকে ৩১ জুলাই পাবনা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বিজ্ঞপ্তিতে যে যোগ্যতা উল্লেখ করা হয়েছে, তা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের মানদণ্ড পূরণ করে না।
কলেজ সূত্রে অভিযোগ, পরিচালনা পরিষদের সভাপতি নূরুল আলম শুভ ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম যৌথভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, স্বীকৃতি গোপন রেখে পরিকল্পিতভাবে বিজ্ঞাপন তৈরি করা হয়েছে যাতে অধ্যক্ষ পদে সাইফুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া যায়।
পাবনা সিটি কলেজ ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৪ সাল থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি (পাস) কোর্স চালু হয়েছে। বর্তমানে কলেজে:
- ডিগ্রি পর্যায়ে ১৪ জন শিক্ষক
- উচ্চ মাধ্যমিকে ২২ জন শিক্ষক
- কারিগরি পর্যায়ে ৭ জন শিক্ষক
- কর্মকর্তা ও কর্মচারী ১৩ জন
- প্রায় ১,১০০ শিক্ষার্থী
২০০৭ সাল থেকে প্রতি বছর শতাধিক শিক্ষার্থী ডিগ্রি পরীক্ষায় অংশ নিলেও চলতি বছরের বিজ্ঞপ্তিতে তা উল্লেখ করা হয়নি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেজাউল ইসলাম জানিয়েছেন, এই বছর ডিগ্রি পর্যায়ে মাত্র দুই শিক্ষার্থী রয়েছে।
কলেজ পরিচালনা পর্ষদের একাধিক সদস্যের অভিযোগ, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ৫ জন আবেদন জমা দিলেও অধ্যক্ষ পদে সাইফুল ইসলামকে নিয়োগ দিতে সভাপতি চাপ দিচ্ছেন। তারা জানিয়েছেন, এই অবৈধ প্রক্রিয়া বন্ধ না হলে তারা পদত্যাগ করবেন।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেজাউল ইসলাম বলেন, “আমি বিষয়টি সম্পর্কে বেশি জানি না। আবেদনপত্র অফিসে জমা নেওয়া হচ্ছে, আমার খুব কিছু করার নেই।”
- রিডও: শিক্ষক নিবন্ধন
- রিডও: জাকসু নির্বাচন – ছাত্রশিবির সভাপতির বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ ছাত্রদলের
- হোম পেজে যান: dainikshiksha
পাবনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “এ বিষয়ে আমরা চিন্তিত। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড রাজশাহীর কলেজ শাখার পরিচালক আসাদ জামান বলেন, “পাবনা সিটি কলেজে ডিগ্রি ও উচ্চ মাধ্যমিক উভয় অনুমোদন রয়েছে। তবে ডিগ্রির শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত নন, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত। আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।”
কলেজ পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি নূরুল আলম শুভ বলেন, “কোনো অনিয়ম করা হয়নি। পদত্যাগপত্র প্রস্তুত আছে। অধ্যক্ষ নিয়োগে জালিয়াতি বা তথ্য গোপনের অভিযোগ সঠিক নয়। সব নিয়ম মেনে স্বচ্ছভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সিটি কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক হিসেবে অনুমোদিত।”
তবে ২০০৫ সাল থেকে শতাধিক ছাত্র ভর্তি এবং ১৪ জন ডিগ্রি শিক্ষক থাকার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, “ডিগ্রির অনুমোদন অনেক আগেই বাতিল হয়ে গেছে। এই শিক্ষকরা এখনও এমপিওভুক্ত নন।”
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ’s)
কেন পাবনা সিটি কলেজকে হঠাৎ উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ হিসেবে উল্লেখ করা হলো?
তথ্য অনুসারে, কলেজের ডিগ্রি পর্যায়ের স্বীকৃতি গোপন রেখে উচ্চ মাধ্যমিক অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য যে যোগ্যতা চাওয়া হয়, তা কি যথেষ্ট নয়?
হ্যাঁ, ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ পদে যে যোগ্যতা প্রয়োজন, তা এই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত উচ্চ মাধ্যমিক মানদণ্ডের সাথে মিলে না।
কলেজ পরিচালনা পর্ষদ এই বিষয়টি নিয়ে কি বলেছে?
পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নূরুল আলম শুভ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং জানিয়েছেন, সব নিয়ম মেনে স্বচ্ছভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা কি প্রভাবিত হবে?
ডিগ্রি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার অব্যাহততা ও স্বীকৃতিতে প্রভাব পড়তে পারে, কারণ ডিগ্রি কোর্সের অনুমোদন বর্তমানে সীমিত।
কলেজের ডিগ্রি কোর্স এখনও চালু আছে কি?
হ্যাঁ, তবে চলতি বছর ডিগ্রি পর্যায়ে মাত্র দুজন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
ডিগ্রি শিক্ষকরা কি এমপিওভুক্ত?
না, ডিগ্রি পর্যায়ের শিক্ষকরা এখনও এমপিওভুক্ত নন। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত।
কলেজে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কি অনিয়ম হয়েছে?
কয়েকজন কলেজ কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সাইফুল ইসলামকে অধ্যক্ষ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে বিজ্ঞপ্তি তৈরি করা হয়েছে।
উপসংহার
পাবনা সিটি কলেজের হঠাৎ উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ হিসেবে নামানোর ঘটনা শিক্ষাক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও নিয়মকানুনের গুরুত্বকে সামনে এনেছে। কলেজ পরিচালনা পর্ষদ, অধ্যক্ষ এবং স্থানীয় শিক্ষা কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হলেও, শিক্ষার্থীদের অধিকার ও শিক্ষার মান অক্ষুণ্ণ রাখাই মূল চ্যালেঞ্জ।