৪৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তন এবং সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়ে দীর্ঘ আন্দোলনের পর পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করেন, পর্যাপ্ত প্রস্তুতির সুযোগ না দেওয়া, পুরনো ও নতুন পরীক্ষার্থীর মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-পীড়নের কারণে তাদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষিত হয়েছে।
পরীক্ষার্থীরা বলেন, লিখিত পরীক্ষার নতুন সময়সূচি না বদলানোয় অনেক শিক্ষার্থী প্রস্তুতির অভাবে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। মানবিক বিবেচনা ও ন্যায্য প্রতিযোগিতার স্বার্থে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার আহ্বান উপেক্ষিত হওয়ায় তারা পরীক্ষাটি বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ৪৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার্থী ব্যানারের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন সাইফ মুরাদ। তিনি বলেন, “দীর্ঘ আন্দোলনের পরও আমাদের অবস্থার প্রকৃত চিত্র অনেকেই জানেন না। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করার কোনো ইচ্ছা নেই। পরীক্ষায় অস্বাভাবিকভাবে কম উপস্থিতি হলে আমরা পুনরায় আন্দোলনের প্রস্তুতি নেব।”
সাইফ মুরাদ জানান, গত ৩০ দিনে তারা বিভিন্ন সময় পিএসসি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সমস্যার সমাধান চেয়েছেন। এই সময়ে আন্দোলনকারীরা একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছেন। “প্রথম ৩০ দিন রাস্তায় যাইনি, মানুষ জানতেও পারেনি আমরা আন্দোলন করছি। শেষ পর্যায়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে কর্মসূচি নিতে হয়েছে। এর জন্য কিছুটা অসুবিধা হয়েছে, তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি,” তিনি বলেন।
তিনি আরও বলেন, “দেশে এমন একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে যেখানে পেশিশক্তির ভিত্তিতে অনেক অযৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া হয়। আমাদের দাবি ছিল শুধু সময় বৃদ্ধি, যাতে নতুন পরীক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিতে পারে এবং পুরনো পরীক্ষার্থীদের তুলনায় প্রতিযোগিতায় বৈষম্য না ঘটে।”
লিখিত পরীক্ষার রুটিন নিয়ে তিনি বলেন, পুরনো পরীক্ষার্থীরা মাত্র তিন মাস আগে একটি লিখিত পরীক্ষা দিয়েছে, তাই তারা প্রস্তুত থাকতে পারেন। কিন্তু নতুন পরীক্ষার্থীদের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি সম্ভব হয়নি। এটি বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
মুরাদ অভিযোগ করেন, আন্দোলনের সময় ৪০–৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, কেউ কেউ ১০টির বেশি সেলাই নিয়েছেন। আহত অবস্থায় পরীক্ষায় বসা সম্ভব হয়নি, তবে পিএসসি বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো খোঁজ নেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, “আমরা রাজনৈতিক কোনো স্লোগান দিইনি। আমরা শুধু ন্যায্য প্রতিযোগিতার সুযোগ চেয়েছি। কিন্তু পিএসসির চেয়ারম্যান নিজের রোডম্যাপের জেদে পরীক্ষা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন।”
অপরদিকে, সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) এখনও আগের সিদ্ধান্তেই অটল রয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, ৪৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আগামীকাল ২৭ নভেম্বর থেকে শুরু হবে।
লিখিত পরীক্ষা দেশের ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ—এই আটটি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। তবে পদ-সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় শুধুমাত্র ঢাকায় পরীক্ষা নেওয়া হবে।
শিক্ষাসহ সব গুরুত্বপূর্ণ খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন। বেল বাটন ক্লিক করলে আপনার ডিভাইসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিউজ নোটিফিকেশন পৌঁছাবে।
উপসংহার
৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত তাদের ন্যায্য দাবির প্রকাশ। দীর্ঘ আন্দোলন, পর্যাপ্ত প্রস্তুতির সুযোগ না থাকা, এবং পরীক্ষার রুটিনে বৈষম্য প্রয়োগের কারণে তারা এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি মেনে নিলে নতুন ও পুরনো পরীক্ষার্থীর মধ্যে সমান সুযোগ নিশ্চিত হত। এই পরিস্থিতি দেখায় যে, ন্যায্য প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রশাসনের আরও সহানুভূতিশীল ও মানবিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।
