নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচির প্রথম দিনেই অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এতে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কর্মসূচি চালু হওয়ার কথা ছিল।
সমগ্র উপজেলার শিক্ষার্থীরা অধীর আগ্রহে খাবারের অপেক্ষায় ছিল। শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে ১৬ নভেম্বর রোববার শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জানিয়েছিলেন ১৭ নভেম্বর তাদের স্কুল ফিডিংয়ের মাধ্যমে খাবার দেওয়া হবে। কিন্তু অধিকাংশ বিদ্যালয়ে খাবার পৌঁছায়নি। অল্প কিছু বিদ্যালয়ে খাবার পৌঁছালেও তা যথাসময়ে দেওয়া হয়নি। কিছু বিদ্যালয়ে দুই ধরনের খাবারের মধ্যে একটি খাবার পাওয়া গেছে, কিছু বিদ্যালয়ে দুটোই। এছাড়া প্রাপ্ত খাবারের পরিমাণ ১০% কম ছিল। আজকের মেনুতে ছিল দুধ ও রুটি, কিন্তু রুটির উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ স্পষ্টভাবে লেখা ছিল না।
কোন ঠিকাদার বা কারা এই খাবার বিতরণ করছে, তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। শিবপুর উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ২৩,৮৯৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
শিবপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাসুদুর রহমান খান জানান, “দুটি খাবারের মধ্যে একটি খাবার দেওয়া হয়েছে। দেরিতে দেওয়ার কারণে সকালের ছাত্রদের খাবার দেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রাপ্ত খাবারের পরিমাণ ১০% কম।”
শিবপুর উপজেলা প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবু হানিফও জানিয়েছেন, তার বিদ্যালয়ে দুই ধরনের খাবারের পরিমাণ ১০% কমে বিতরণ করা হয়েছে। মাছিমপুর ইউনিয়নের ধানুয়া উত্তরপারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক মানিক মিয়া বলেন, “পূর্বে জানানো হয়েছিল খাবার দেওয়া হবে। কিন্তু আমার সন্তান শুধু রুটি পেয়েছে, দুধ পাইনি।” বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন জানান, “প্রথম লিফটের শিশু ও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা খাবার পাননি। দ্বিতীয় শিফটের ৩, ৪, ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দুটি খাবারের মধ্যে একটি পেয়েছে, তাও ১০% কম।”
দুলালপুর ইউনিয়নের সাতপাইকা ও গড়বাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরাও জানিয়েছেন, তাদের ইউনিয়নের কোনো বিদ্যালয়ে খাবার দেওয়া হয়নি।
শিবপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ কবিরুল ইসলাম বলেন, “কারা স্কুল ফিডিংয়ের খাবার দিচ্ছে, আমরা জানি না। সকল বিদ্যালয়ে আজকে খাবার পাওয়া যায়নি। যে বিদ্যালয় পেয়েছে, তা সময়মত পৌঁছায়নি।”
শিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা: ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, “স্কুল ফিডিংয়ের খাবার কারা বিতরণ করবে, সে সম্পর্কে আমি অবগত নই। কেউ আমার সাথে যোগাযোগও করেনি।”
শিক্ষা ও স্থানীয় খবর সবসময় সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল আইকন ক্লিক করুন।
উপসংহার
শিবপুর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচির প্রথম দিনেই অনিয়ম ও বিতরণের সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীরা তাদের খাবার ঠিকমতো পাননি। অনিয়ম ও তথ্যের অভাবে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হবে, যাতে শিশুরা নিয়মিত ও সঠিক সময়ে পুষ্টিকর খাবার পায়।
