মুন্সিগঞ্জ শহরের সরকারি মহিলা কলেজে কয়েকটি পুরনো গাছ টেন্ডার ছাড়াই কেটে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল হামিদ মোল্লার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, গাছ কাটার আগে কোনো মিটিং বা রেজল্যুশন হয়নি। জানা গেছে, ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর কলেজ প্রাঙ্গণে থাকা প্রায় ৩৫–৪০ বছরের পুরনো আমগাছসহ অন্যান্য গাছ অনুমোদন ছাড়া কেটে বিক্রি করা হয়। স্থানীয়রা গাছ কেটে গাড়িতে তোলা পর্যন্ত প্রত্যক্ষ করেছেন।
নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে থাকা গাছ কাটতে প্রশাসনের অনুমতি ও টেন্ডার প্রক্রিয়া অবশ্যক। বন বিভাগের যাচাই-বাছাই শেষে গাছের মূল্য নির্ধারণ করে কাটা হয়। কিন্তু অভিযোগ, এই সব প্রক্রিয়া এড়িয়ে গাছ কাটা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, বহু বছর ধরে এই গাছগুলো কলেজের পরিবেশ রক্ষা ও শিক্ষার্থীদের ছায়া দিচ্ছিল। গাছ কেটে ফেলার পর শিক্ষার্থীরা প্রচণ্ড রোদে পড়েছেন। গাছ বিক্রির ৫ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেখানো হলেও বাস্তবে প্রায় ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল হামিদ মোল্লা জানান, ‘রাস্তা করার জন্য ছোট কিছু গাছ কাটা হয়েছে। একটি গাছ মরা ছিল। সদর উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান বাদশার মৌখিক অনুমোদন নিয়েই কাটা হয়েছে।’ তবে তিনি মৌখিক অনুমোদনের বৈধতা বিষয়ে স্পষ্ট জবাব দিতে পারেননি।
উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী (পুর কৌশল) মো. শাহাজাহান বাদশা বলেন, ‘আমি মৌখিক অনুমতি দেওয়ার কেউ নই। এটি বন বিভাগ ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ের বিষয়।’
জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মৌরিন আক্তার মৌ জানান, গাছ কাটার অনুমতি দেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বলেন, ‘সরকারি মহিলা কলেজে টেন্ডার ছাড়া গাছ কাটা হয়েছে তা আমার জানা ছিল না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
শিক্ষা ও স্থানীয় খবরগুলো প্রথমে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল ফলো করুন। সাবস্ক্রাইব ও বেল বাটন ক্লিক করলে নতুন ভিডিওয়ের নোটিফিকেশন সরাসরি আপনার ফোনে বা কম্পিউটারে পৌঁছে যাবে।
সাধারণভাবে জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ’s)
সরকারি মহিলা কলেজে গাছ কেন টেন্ডার ছাড়াই বিক্রি করা হলো?
অভিযোগ অনুযায়ী, কিছু পুরনো গাছ অনুমোদন ছাড়া কেটে বিক্রি করা হয়েছে। প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ী টেন্ডার বা অনুমোদন থাকা আবশ্যক।
গাছ কাটার আগে কি কোনো মিটিং বা রেজল্যুশন হয়েছিল?
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গাছ কাটার আগে কোনো মিটিং বা অফিসিয়াল রেজল্যুশন হয়নি।
কত বছর বয়সী গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে?
প্রায় ৩৫–৪০ বছরের পুরনো আমগাছসহ অন্যান্য গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী গাছ কাটার প্রক্রিয়া কী?
সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গাছ কাটার জন্য প্রশাসনের অনুমতি, টেন্ডার বা নিলাম প্রক্রিয়া এবং বন বিভাগের যাচাই-বাছাই আবশ্যক।
স্থানীয়রা গাছ কাটার বিষয়ে কি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে?
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গাছগুলো কলেজের পরিবেশ রক্ষা ও শিক্ষার্থীদের ছায়া দিচ্ছিল। গাছ কেটে ফেলার পর শিক্ষার্থীরা প্রচণ্ড রোদে ভোগান্তিতে পড়েছে।
গাছ বিক্রি থেকে কত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে?
সরকারি রেকর্ডে ৫ হাজার টাকা দেখানো হলেও স্থানীয়দের অভিযোগ, বাস্তবে প্রায় ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।
অধ্যক্ষ কি বিষয়টি স্বীকার করেছেন?
অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল হামিদ মোল্লা জানিয়েছেন, রাস্তা করার জন্য কিছু ছোট গাছ কাটা হয়েছে এবং একটি গাছ মরা ছিল। তবে মৌখিক অনুমোদনের বৈধতা বিষয়ে স্পষ্টতা দেননি।
উপসংহার
মুন্সিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে পুরনো গাছগুলো টেন্ডার ছাড়া কেটে বিক্রি করার ঘটনা শিক্ষার্থী, স্থানীয়রা এবং প্রশাসনের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, গাছ কাটার পূর্বে কোনো মিটিং বা অনুমোদন হয়নি এবং সরকারি নিয়মও উপেক্ষিত হয়েছে। গাছগুলো বহু বছর ধরে কলেজের পরিবেশ রক্ষা ও শিক্ষার্থীদের ছায়া প্রদান করছিল। এই ঘটনায় প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও নিয়মাবলী মেনে কাজ করার গুরুত্ব আবারও উঠে এসেছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে টেন্ডার ও অনুমোদন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুসরণ করা প্রয়োজন।
