জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার তেলিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-এ শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ সরকারি দুধ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কিছু শিক্ষক অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর নাম দেখিয়ে সরকারি স্কুল মিল্ক ফিডিং কর্মসূচির দুধ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। এতে স্থানীয় অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুধ পান কর্মসূচি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। কর্মসূচির লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের পুষ্টি ঘাটতি দূর করা এবং বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বাড়ানো। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে পাঁচ দিন ২০০ মিলিলিটার দুধ সরবরাহের কথা। কালাইয়ের তেলিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও এই কর্মসূচির আওতায় রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যালয়ে নিবন্ধিত ৮২ জন শিক্ষার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষক অতিরিক্ত ৩৮ জনের নাম যুক্ত করে প্রতিদিন ১২০ জনের নামে দুধ তুলছেন। উপস্থিত শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর শিটে জাল স্বাক্ষর করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে জমা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষক এমন শিক্ষার্থীর নাম যুক্ত করেছেন যারা স্থানীয় নয় বা স্কুলে কখনো আসে না। এসব শিক্ষার্থীর বরাদ্দ দুধ শিক্ষকরা বাড়িতে নিয়ে যান।
অভিভাবক রমজান আলী বলেন, “গত রোববার স্কুলে ৫৩ জন শিশু ছিল, অথচ দুধ এসেছে ১১০ জনের নামে। বাকি দুধ শিক্ষকরা নিজেদের জন্য নিয়েছেন।”
প্রধান শিক্ষক উদয় চন্দ্র পাল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “প্রতিদিন গড়ে ৯০–৯৫ জনের জন্য দুধ আসে, উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। বন্ধের দিন দুধ তোলার অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রাশেদুল আলম বলেন, “যদিও প্রকল্পটি প্রাণিসম্পদ দপ্তরের আওতায়, তবুও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে এবং ভবিষ্যতে তদারকি কমিটি গঠন করা হবে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শিশুদের পুষ্টির জন্য সরকারের এই মানবিক উদ্যোগে শিক্ষকরা স্বার্থ হাসিল করলে কর্মসূচির উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে।
সকল শিক্ষাসহ খবর পেতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন।
উপসংহার
কালাইয়ের তেলিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ দুধ আত্মসাতের অভিযোগ সরকারের মানবিক কর্মসূচির উদ্দেশ্যকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করা এবং স্কুলে উপস্থিতি বাড়ানোই এই দুধ পান কর্মসূচির মূল লক্ষ্য, কিন্তু অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে তা ব্যর্থ হতে পারে। শিক্ষকদের স্বার্থপর আচরন রোধ করতে তদারকি বৃদ্ধি ও তদন্ত কমিটি গঠন অপরিহার্য। অভিভাবক ও স্থানীয় জনগণ আশা করছেন, সরকারি উদ্যোগের সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের পুষ্টির অধিকার পেতে পারে।
