রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২১ জুলাই ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনাতে হতাহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণসহ ৮টি দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবারগুলো এই দাবিগুলো জানায়।
পরিবারের ৮টি মূল দাবি
ঘটনার সঠিক তদন্ত ও দ্রুত বিচার
২১ জুলাই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসের হায়দার আলী ভবনে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমানের বিধ্বস্তের ঘটনার যথাযথ তদন্ত এবং দায়ীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
ক্ষতিপূরণ প্রদান
২২ জুলাই জনস্বার্থে দায়ের করা রিট নং ১১৮৪২/২০২৫ অনুযায়ী, নিহতদের জন্য ৫ কোটি টাকা এবং আহতদের জন্য ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
নিঃশুল্ক চিকিৎসা ব্যবস্থা
আগুনে পোড়ার কারণে আহতরা বিভিন্ন মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই আহতরা সিএমএইচ/সরকারি হাসপাতালে আজীবন ফ্রি চিকিৎসা ও ঔষধ পেতে হেলথ কার্ডের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
পুনর্বাসন ও চাকরি
দুর্ঘটনায় আহতরা অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন না। তাদের সরকারি চাকরি প্রদানসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
শোক দিবস ঘোষণার আহ্বান
২১ জুলাই দেশব্যাপী শোক দিবস হিসেবে পালন নিশ্চিত করতে সরকার পদক্ষেপ নিক।
স্থায়ী কবর সংরক্ষণ
নিহতদের অনেককে সিটি করপোরেশন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে; তাদের কবর স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
শহীদ মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা
নিহত পাইলট, শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের শহীদ মর্যাদা (সনদ ও গেজেটসহ) এবং সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
স্মরণে আধুনিক মসজিদ নির্মাণ
বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে উত্তরায় একটি আধুনিক মসজিদ নির্মাণ করা হবে।
পরিবারদের বক্তব্য
পরিবারগুলো জানান, ২১ জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি শোকাবহ দিন। বেলা ১টা ১২ মিনিটে মাইলস্টোন স্কুলের দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসে একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে শিশুসহ শিক্ষক, অভিভাবক ও স্টাফ নিহত এবং আহত হন।
এ পর্যন্ত ৩৭ জন শহীদ হয়েছেন, যার মধ্যে ২৮ জন শিশু, ৩ জন অভিভাবক, ৩ জন শিক্ষক এবং মাসুমা খালা। আহতদের মধ্যে ৯ জন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, “আমাদের সন্তানেরা আগুনে পুড়ে গেছে, আমরা তাদের লাশ কাঁধে নিয়ে দাফন করেছি। আহতরা চিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপি নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। আমাদের সন্তানরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে কি না আমরা জানি না। সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, স্কুলে থাকা শিশুদের নিরাপত্তা এবং দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা যেন কার্যকর হয়। কারণ এই দুর্ঘটনা সরকারের বিমানের কারণে ঘটেছে।”
প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্নাবলী (FAQ’s)
মাইলস্টোন স্কুল বিমান দুর্ঘটনা কবে ঘটেছে?
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসে বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে ২১ জুলাই ২০২৫ তারিখে।
এই দুর্ঘটনায় কতজন নিহত এবং আহত হয়েছে?
দুর্ঘটনায় মোট ৩৭ জন শহীদ হয়েছেন, যার মধ্যে ২৮ জন শিশু, ৩ জন শিক্ষক, ৩ জন অভিভাবক এবং মাসুমা খালা। আহতদের মধ্যে ৯ জন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নিহতদের জন্য কত টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে?
নিহতদের জন্য ৫ কোটি টাকা এবং আহতদের জন্য ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
আহতদের জন্য কোন চিকিৎসা সুবিধা চাওয়া হয়েছে?
আহতরা যাতে সিএমএইচ/সরকারি হাসপাতালে আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ পেতে পারে, সে ব্যবস্থা করার দাবি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার তদন্ত কবে শুরু হবে?
পরিবারগুলো দাবি করছেন, দুর্ঘটনার সঠিক তদন্ত ও দায়ীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে সরকার অবিলম্বে পদক্ষেপ নিক।
দুর্ঘটনার স্মরণে কি ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে?
পরিবারের দাবিতে ২১ জুলাই দেশব্যাপী শোক দিবস হিসেবে পালন করা হবে এবং নিহতদের স্মরণে উত্তরায় আধুনিক মসজিদ নির্মাণ করা হবে।
নিহতদের কবর সংরক্ষণ কিভাবে হবে?
নিহতদের অনেকের কবর সিটি করপোরেশনের কবরস্থানে রয়েছে; পরিবারগুলো দাবি করেছেন, কবরগুলো স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হোক।
উপসংহার
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিমান দুর্ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি শোকাবহ ঘটনা। হতাহত শিশু, শিক্ষক, অভিভাবক ও পাইলটদের পরিবার আজও তাদের ক্ষতি ও কষ্ট সহ্য করছে। পরিবারগুলো ক্ষতিপূরণ, বিনামূল্যে চিকিৎসা, পুনর্বাসন, সরকারি চাকরি এবং শহীদ মর্যাদাসহ ৮টি দাবি তুলেছে, যা দ্রুত কার্যকর করা জরুরি। সরকারী পদক্ষেপের মাধ্যমে এই ঘটনার সঠিক তদন্ত, দায়ীদের বিচার এবং হতাহতদের দীর্ঘমেয়াদী সাহায্য নিশ্চিত করা হলে দেশের মানুষের আস্থা ও ন্যায়বিচারের প্রতি বিশ্বাস পুনরুদ্ধার হবে।