ব্রিটিশ-আমেরিকান সাংবাদিক মেহেদি হাসান জাতীয় নির্বাচন বিলম্ব, রোহিঙ্গা সংকট এবং আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সংক্রান্ত নানা বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকার করেছেন।
নির্বাচন দেরি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “কিছু মানুষ বলেন, ‘আপনি ৫ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন, ৫০ বছর থাকুন।’ সুতরাং, মানুষ নানা ধরনের কথা বলে। তারা প্রশ্ন করেন, নির্বাচনের প্রয়োজন কী এবং কার নির্বাচনের দরকার?”
জেটিওতে মূল সাক্ষাৎকারের তিন মিনিটের একটি ক্লিপ সোমবার রাতে প্রচার করা হয়।
মেহেদি হাসান: আপনার অন্তর্বর্তী সরকার এক বছর ধরে ক্ষমতায়। আপনি বলেছিলেন নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে, যা আসলে আরও পরে হওয়ার কথা ছিল। কেন আগেভাগেই নির্বাচন করছেন?
প্রধান উপদেষ্টা: ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে, যদিও এটি রমজানের কারণে হয়েছে।
মেহেদি হাসান: দেশের মানুষ এখন ফলপ্রসূ কাজ দেখতে চায়। সমালোচকরা বলছেন, অনেক দেরি হয়ে গেছে। নির্বাচনের জন্য আরও ছয় মাস অপেক্ষা খুব দীর্ঘ। কেন আমরা আগে নির্বাচন করতে পারছি না? নেপালে অন্তর্বর্তী সরকার ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করেছে। বাংলাদেশে কেন ১৮ মাস লাগছে?
প্রধান উপদেষ্টা: নিশ্চয়ই, মানুষ প্রশ্ন করছে কেন এত সময় লাগছে। আবার এমন মানুষও আছেন, যারা বলেন, ‘পাঁচ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন, ৫০ বছর থাকুন।’ সুতরাং মানুষ সব ধরনের মতামত প্রকাশ করছে। তারা বলেন, ‘আপনি থাকুন। নির্বাচনের দরকার কী? নির্বাচন কার দরকার?’
মেহেদি হাসান: যারা এমন কথা বলছেন, তারা কি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না? যারা বিশ্বাস করে, তারা কেন দ্রুত নির্বাচন করতে পারছি না তা জানতে চায়।
প্রধান উপদেষ্টা: এই মতামত গণতন্ত্র নিয়ে নয়, বরং সুশাসন নিয়ে। মানুষ চায় দুর্নীতিমুক্ত শাসন। তারা তাই বলেন, ‘আপনি থাকুন!’ কারণ নির্বাচন হলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। আমি যেমন মতামত তুলে ধরেছি, অন্যরাও তাদের মত প্রকাশ করেছে। কোনটি বেশি শক্তিশালী, তা সময়ই বলবে।
মেহেদি হাসান: নির্বাচন পর্যন্ত এত সময় লাগার কারণ কি?
প্রধান উপদেষ্টা: আমরা অন্তর্বর্তী সরকার। আমাদের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়নি। আমাদের তিনটি মূল দায়িত্ব রয়েছে: সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন। আমরা সংস্কারের এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছি। শুধুমাত্র নির্বাচন করলে পুরোনো সমস্যা আবার ফিরে আসবে। ছাত্র নেতৃত্বসহ জনগণ চায় যে ফ্যাসিবাদের শিকড় উপড়ে ফেলা হোক এবং একটি নতুন কাঠামো তৈরি হোক। এটাই আমাদের এজেন্ডা।
মেহেদি হাসান: তবে অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে, কি এই ধরনের বড় সিদ্ধান্তগুলো নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে নেওয়া উচিত নয়?
প্রধান উপদেষ্টা: এতে আমাদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই। আমরা কেবল তিনটি দায়িত্ব পালন করব।
সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ’s)
প্রধান উপদেষ্টা এই সাক্ষাৎকারে কি বলেছেন?
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মানুষের বিভিন্ন মতামত আছে। কেউ বলেন, ৫, ১০ বা ৫০ বছর থাকুন, আবার কেউ নির্বাচনের প্রয়োজন প্রশ্ন করে।
কেন মানুষ বলছে, “আপনি ৫, ১০ বা ৫০ বছর থাকুন”?
এটি গণতন্ত্রের প্রশ্ন নয়, বরং সুশাসনের প্রয়োজনীয়তা ও দুর্নীতিমুক্ত শাসনের জন্য বলা হচ্ছে।
নির্বাচনের দেরি হওয়ার কারণ কী?
অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের আগে সংস্কার, বিচার এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে কাজ করছে। তাই নির্বাচনের সময় কিছুটা দীর্ঘ হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা কোন তিনটি কাজ করতে বলেছেন?
তিনটি কাজ হলো: সংস্কার, বিচার, এবং নির্বাচন।
জনগণ কেন দ্রুত নির্বাচন চাইছে?
জনগণ চায় স্থিতিশীল সরকার এবং ফলপ্রসূ কাজ দেখতে। নির্বাচনের দেরি নিয়ে অনেকেই অস্থির।
নির্বাচনের আগে সংস্কারের প্রয়োজন কেন?
পুরনো আইন, নিয়ম ও পদ্ধতি অপরিবর্তিত থাকলে আগের মতো সমস্যা পুনরায় ঘটতে পারে। সংস্কারের মাধ্যমে একটি নতুন কাঠামো তৈরি করা হয়।
রোহিঙ্গা সংকট ও আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা কি মন্তব্য করেছেন?
তিনি সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে কথা বলেছেন, তবে মূল ফোকাস সুশাসন ও নির্বাচন নিশ্চিত করা।
উপসংহার
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎকার থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, দেশের সুশাসন, সংস্কার এবং নির্বাচন একসাথে এগিয়ে চলার প্রয়োজন। মানুষ নানা ধরনের মতামত রাখলেও, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য হলো দুর্নীতিমুক্ত শাসন নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনের আগে সঠিক কাঠামো তৈরি করা। ৫, ১০ বা ৫০ বছর থাকার পরামর্শ শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়, বরং দেশের স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে বলা হয়েছে। এই সাক্ষাৎকার জনগণকে বুঝতে সাহায্য করে কেন নির্বাচনের আগে সময় নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ এবং দেশের ভবিষ্যতের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য।
