দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টায় শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে। ভোট শুরু হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্রে উচ্চ ভোটার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ভোট দিয়ে শিক্ষার্থীরা আনন্দ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।
সাফিয়া আমিন, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের বেগম খালেদা জিয়া হল কেন্দ্রের ২০৬ নম্বর কক্ষে ভোটার ছিলেন। ভোট দেওয়ার পর তিনি বলেন, “এটাই আমার প্রথম ভোট। ৩৫ বছর পর একটি চাকসু নির্বাচন হচ্ছে, সেখানে আমি ভোট দিয়েছি। খুব আনন্দ লাগছে। যোগ্য প্রার্থীকে আমার ভোট দিয়েছি, আশা করি তারা বিজয়ী হবে।”
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পায়েল মুহুরী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভবনে ভোট দেন। তিনি বলেন, “আমি রাউজান থেকে এসেছি। প্রথম ভোট দেওয়ার অনুভূতি অসাধারণ। ক্যাম্পাসে নির্বাচন হওয়ায় সত্যিকারের উৎসবের মতো লাগছে। পরিবেশও শান্তিপূর্ণ।”
চারুকলা ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাবিহা আবছার বলেন, “জীবনে প্রথমবার ভোট দিলাম। একসঙ্গে ৪০টি পদে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলাম। জাতীয় বা স্থানীয় নির্বাচনে এ ধরনের পরিবেশ ছিল না, তাই চাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পেরে খুব আনন্দিত।”
তার পাশের ভোটার সাবরিনা সুলতানা বলেন, “প্রস্তুতি করেছি যেন পরীক্ষার মতো সঠিকভাবে ভোট দিতে পারি। যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়েছি, যারা ছাত্রকল্যাণে কাজ করবে।”
বিজয় ২৪ হলের শিক্ষার্থী ফাইরুজও প্রথমবার ভোট দেন। তিনি জানান, “৩৫ বছর পর হওয়া নির্বাচনে ভোট দিয়ে ইতিহাসের অংশ হতে পেরে খুবই আনন্দিত। আশা করছি, এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সচল করবে।”
이번 চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ১৯৯০ সালের পর প্রথম। নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ১৩ প্যানেল, ২৩২ পদে মোট ৯০৮ জন প্রার্থী।
নির্বাচন কমিশন জানায়, একজন ভোটারের জন্য সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সময় রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪০টি পদে ভোট দিতে হবে, অর্থাৎ গড়ে প্রতি ১৫ সেকেন্ডে একটি ভোট।
ভোট পদ্ধতি: ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ হবে এবং গণনা ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে হবে।
- কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৫ জন প্রার্থী।
- ১৪টি হল ও একটি হোস্টেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৯৩ জন, যার মধ্যে নারী প্রার্থী মাত্র ৪৭ জন।
- প্রতিটি হলে রয়েছে ১৪টি করে পদ।
- নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৭,৫১৮ জন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ’s)
প্রথমবার ভোট দেওয়ার অনুভূতি কেমন হয়?
প্রথমবার ভোট দেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ এবং গর্বের মুহূর্ত। এটি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের প্রথম ধাপ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হলো?
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো ১৫ অক্টোবর, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
প্রথমবার ভোট দেওয়া শিক্ষার্থীরা কীভাবে প্রস্তুতি নেয়?
বিভিন্ন শিক্ষার্থী ভোটার তালিকা যাচাই, প্রার্থীর তথ্য পড়া এবং ভোট কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে প্রস্তুতি নেয়।
শিক্ষার্থীরা কেন প্রথমবার ভোট দেওয়ার সময় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে?
এটি তাদের প্রথম নির্বাচনী অভিজ্ঞতা, যেখানে তারা সরাসরি প্রার্থী নির্বাচন করতে পারে এবং ছাত্রসংসদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে।
ভোট দিতে শিক্ষার্থীরা কত সময় পাচ্ছেন?
প্রতি ভোটারের জন্য সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সময় নির্ধারিত আছে।
ভোট প্রদান পদ্ধতি কীভাবে হচ্ছে?
ভোট প্রদান হবে ব্যালট পেপারে, এবং গণনা হবে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে।
শিক্ষার্থীরা কীভাবে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করে?
শিক্ষার্থীরা প্রার্থীর কর্মপরিকল্পনা, ছাত্রকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড এবং প্যানেলের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ভোট দেয়।
উপসংহার
প্রথমবার ভোট দেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য এটি শুধু একটি গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের মুহূর্ত নয়, বরং তাদের দায়িত্ববোধ ও নেতৃত্ব বিকাশের সূচনা। ৩৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা নিজেরাই প্রমাণ করেছে যে নতুন প্রজন্ম সচেতন, উদ্যমী এবং উত্তেজনাপূর্ণভাবে ভোট দেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থী রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারে। এই উচ্ছ্বাস ও অংশগ্রহণ শুধুমাত্র এক দিনের ঘটনা নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গঠনের সূচনা।
