ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরের বুধানা এলাকায় বকেয়া ফি জমা না দেওয়ায় বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র উজ্জ্বল রানা (২২) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। রোববার (৯ নভেম্বর) এনডিটিভির খবরে বলা হয়, হতাশার কারণে নিজেকে শেষ করার উদ্দেশ্যে তিনি শরীরে আগুন ধরান। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দিল্লির একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
এই ঘটনায় ভ্রান্তি ও গাফিলতির অভিযোগে সাব-ইন্সপেক্টর নন্দ কিশোর এবং কনস্টেবল ভিনীত ও জ্ঞানবীরকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার সঞ্জয় কুমার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ভুক্তভোগীর চাচা শচীন রানা জানান, উজ্জ্বল রানাকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, পরে দিল্লিতে স্থানান্তর করা হয়। পরিবার জানায়, উজ্জ্বল ডিএভি কলেজে পড়তেন এবং বকেয়া ফি না দেওয়ার কারণে তাকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়নি। কলেজ প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ করার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডেকে আনে।
উজ্জ্বল রানার পরিবারের অভিযোগ, কিছু পুলিশ সদস্য ও কলেজ কর্মকর্তা তাকে হয়রানি করেন। এরপরই উজ্জ্বল নিজেই শরীরে আগুন ধরান, যার ফলে তার শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ পুড়ে যায়।
উজ্জ্বলের বোন সালোনি রানা কলেজের ব্যবস্থাপক অরবিন্দ গর্গ, অধ্যক্ষ প্রদীপ কুমার, শিক্ষক সঞ্জীব কুমার এবং তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এসপি কুমার জানিয়েছেন, মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের জন্য একটি টিম গঠন করা হয়েছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী অনিল কুমার জেলা কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অজয় রাই উজ্জ্বল রানার মৃত্যুর জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন এবং এই ঘটনার শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করে “সিস্টেমের দ্বারা হত্যা” বলেও উল্লেখ করেছেন।
কংগ্রেস দাবি করেছে, উজ্জ্বলের পরিবারের জন্য ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ এবং একজনকে সরকারি চাকরি দেওয়া হোক। এছাড়াও তারা অভিযোগ করেছেন কলেজ কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মীদের গ্রেপ্তারের এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ফি নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন। আর্থিকভাবে দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সহায়তা তহবিল গঠনেরও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
উপসংহার
উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরের এই মর্মান্তিক ঘটনা শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা ও বেসরকারি কলেজে ফি ও প্রশাসনিক জটিলতার বাস্তব প্রতিফলন। উজ্জ্বল রানার আত্মহত্যা শুধু তার পরিবারকেই শোকের মধ্যে ফেলে নয়, বরং পুরো সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থাকে ভাবিয়ে তুলেছে। এই দুঃখজনক ঘটনায় প্রমাণিত হলো, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও ন্যায্য সুযোগ সুনিশ্চিত করা কতটা জরুরি। প্রশাসন, কলেজ কর্তৃপক্ষ ও আইন প্রণেতাদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা অপরিহার্য।
