জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেছেন, বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের বড় অংশের মালিকানা থাকা সত্ত্বেও দেশের সক্ষমতা অনুযায়ী সমুদ্রসম্পদ আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য সরকারকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদেশি সহযোগিতার দিকে তাকাতে হচ্ছে।
ড. আমানুল্লাহ আরও উল্লেখ করেছেন, বিশ্বের অনেক দেশ সমুদ্রসম্পদ আহরণের দক্ষতা অর্জন করলেও তাদের দক্ষ জনশক্তি সংকটে রয়েছে। বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক তরুণ বেকার থাকলেও দক্ষতার অভাবে তারা আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে প্রবেশ করতে পারছে না।
রোববার রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত “ব্লু ইকোনমি গ্রোথ ইনিশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ” সেমিনারে অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন ড. আমানুল্লাহ।
ভিসি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী শিক্ষা দেওয়ার জন্য স্নাতক সম্মানে আইসিটি ও ইংরেজি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া কারিগরি প্রশিক্ষণের জন্য এটুআই, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও ইউনিসেফ-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে।
ড. আমানুল্লাহ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাভেন, সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক ও জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বের আলোচনা চলছে। এই উদ্যোগে বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিও যুক্ত হতে পারে।
সেমিনারটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেশন অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ল্যাব এবং বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অফ মেরিটাইম বিজনেস স্টাডিজ যৌথভাবে আয়োজন করেছে। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির মেরিটাইম ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান ড. মো. সাইফুল ইসলাম, এবং প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভাইস-চ্যান্সেলর রিয়ার অ্যাডমিরাল ড. খন্দকার আক্তার হোসেন।
ড. আমানুল্লাহ বলেন, সমুদ্র, পর্যটন ও বিমান খাতের প্রফেশনাল শিক্ষা সম্প্রসারণে বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও তরুণদের প্রফেশনাল কোর্সের আওতায় আনার জন্য মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চায়।
প্রধান অতিথি রিয়ার অ্যাডমিরাল ড. খন্দকার আক্তার হোসেন বলেন, দক্ষ জনবল তৈরিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথভাবে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, এবং দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হতে পারে।
সেমিনারে ব্লু হোরাইজনস: লিভারেজিং এআই ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশের মেরিটাইম ইকোনমি, কোস্টাল অ্যান্ড মেরিটাইম ট্যুরিজম: সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভস ফর বাংলাদেশ, এবং শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে ড. রমিজ উদ্দিন, ড. মো. আনোয়ার হোসেন ভূইয়াঁ এবং রিয়ার অ্যাডমিরাল ড. খন্দকার আক্তার হোসেন।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে সমাপনী বক্তব্য দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও ইনোভেশন অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ল্যাবের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. আবুদ্দারদা।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ’s)
কেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে প্রবেশ করতে পারছে না?
ভাইস-চ্যান্সেলর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেছেন, মূলত দক্ষতার অভাব এবং কারিগরি প্রশিক্ষণের সীমিত সুযোগ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক চাকরির জন্য প্রস্তুত নয়।
বাংলাদেশের কোন ক্ষেত্রগুলোতে দক্ষ জনবল সংকট বেশি দেখা যাচ্ছে?
বিশেষ করে সমুদ্রসম্পদ, পর্যটন, বিমান খাত এবং অন্যান্য প্রফেশনাল ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল তৈরি করার প্রয়োজন রয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী করছে?
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক সম্মানে আইসিটি এবং ইংরেজি বিষয় বাধ্যতামূলক করেছে এবং কারিগরি প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
কোন সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যৌথ উদ্যোগ নিচ্ছে?
এটুআই, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ইউনিসেফ, এবং আন্তর্জাতিকভাবে ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাভেন, সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক, জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বের আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির ভূমিকা কী?
বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি সমুদ্র, পর্যটন ও বিমান খাতের প্রফেশনাল শিক্ষা সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে প্রবেশের জন্য শিক্ষার্থীদের কী ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন?
কারিগরি দক্ষতা, আইসিটি জ্ঞান, ইংরেজি ভাষার দক্ষতা, এবং প্রফেশনাল ট্রেনিং শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক বাজারে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।
কীভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তুলছে?
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কারিগরি প্রশিক্ষণ, প্রফেশনাল কোর্স, এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী করে তুলছে।
উপসংহার
ভাইস-চ্যান্সেলর ড. এ এস এম আমানুল্লাহর বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে, বাংলাদেশের তরুণরা বেকার থাকলেও দক্ষতার অভাবে আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে প্রবেশে পিছিয়ে আছে। এটি শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের নয়, দেশের অর্থনৈতিক ও প্রফেশনাল উন্নয়নের জন্যও একটি চ্যালেঞ্জ।
