ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন ঘিরে নতুন বিতর্ক। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবদুল কাদের অভিযোগ করেছেন, ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী সাদিক কায়েম ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে ‘মেকানিজম’ (কারসাজি) করেছেন, আর বাইরে থেকে ছাত্রদল মেকানিজম চালাচ্ছে।
আবদুল কাদেরের অভিযোগ সংবাদ সম্মেলনে
মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক কাদের বলেন,
- ডাকসু নির্বাচন মূলত জামায়াত–বিএনপি ও ছাত্রদল–শিবিরের ক্ষমতার ভাগাভাগি।
- শিক্ষার্থীদের স্বার্থ এখানে উপেক্ষিত হয়েছে।
- নির্বাচন কমিশন নতজানু, অথর্ব এবং দলীয় প্রভাবে বিভক্ত।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা
কাদের অভিযোগ করেন, প্রচারণা থেকে মনোনয়নপত্র পর্যন্ত নানা বিধিনিষেধ থাকলেও নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে বারবার, অথচ কমিশন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তার দাবি, “এই নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ, তারা সুষ্ঠু ভোট আয়োজন করতে পারেনি।”
ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ
তিনি জানান, ভোটকেন্দ্রে আগে থেকেই ব্যালট পেপার পূরণ করা ছিল। অভিযোগ করলে শুধু ব্যালট পরিবর্তনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এ থেকেই প্রমাণিত হয়, প্রশাসন ও কমিশন শিক্ষার্থীদের স্বার্থ নয় বরং দলীয় স্বার্থে কাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে তোপ
আবদুল কাদের আরও বলেন, উপাচার্য একটি সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিম (এসএমটি) গঠন করে প্রক্টরকে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দুতে বসিয়েছেন। তার মতে, প্রক্টর শিক্ষকের মর্যাদায় ভিসির নিচে হলেও তাকে ক্ষমতাশালী করা হয়েছে “জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য।”
তিনি অভিযোগ করেন,
- প্রক্টর হলগুলোতে শৃঙ্খলা কমিটির নামে ছায়া সরকার চালাচ্ছেন।
- ১৭০ জন পোলিং অফিসার নিয়োগের তথ্য শুধু প্রক্টরের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
শিক্ষার্থীদের স্বার্থ উপেক্ষিত
ভিপি প্রার্থী বলেন, “আজকের নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা আন্তরিকভাবে অংশ নিলেও প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতার কারণে এটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা দাবি করছি এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।”
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ’s)
আবদুল কাদের কে?
আবদুল কাদের বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক।
সাদিক কায়েমের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে?
অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে ‘মেকানিজম’ বা কারসাজি করেছেন।
ছাত্রদলকে কেন দায়ী করা হচ্ছে?
আবদুল কাদেরের দাবি, ছাত্রদল বাইরে থেকে ভোট প্রক্রিয়ায় মেকানিজম বা নিয়ন্ত্রণ চালিয়েছে।
এই অভিযোগ কোথায় করা হয়েছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে আবদুল কাদের অভিযোগগুলো উত্থাপন করেছেন।
নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
তাঁর অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ অথর্ব ও নতজানু, যারা দলীয় প্রভাবে বিভক্ত হয়ে কাজ করেছে।
ভোটকেন্দ্রে কী ধরনের অনিয়ম দেখা গেছে?
কাদেরের দাবি, আগে থেকেই ব্যালট পেপারে নাম পূরণ করা ছিল এবং অভিযোগ করলেও কেবল ব্যালট পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে কী অভিযোগ আছে?
তিনি বলেন, ভিসি প্রশাসনের সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিম গঠন করে প্রক্টরকে অস্বাভাবিক ক্ষমতা দিয়েছেন, যা ছাত্ররাজনীতির পক্ষপাতমূলক প্রয়োগ।
উপসংহার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন ঘিরে আবদুল কাদেরের অভিযোগ স্পষ্ট করেছে যে ভোট প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের আস্থার জায়গা থেকে সরে গিয়ে দলীয় প্রভাব ও মেকানিজমের মধ্যে বন্দী হয়ে পড়েছে। ভেতরে সাদিক কায়েমের কারসাজি এবং বাইরে ছাত্রদলের নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কার্যকারিতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলে। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ছিল একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, কিন্তু প্রশাসনের অদক্ষতা ও দলীয় বিভাজন সেই আশা ভেঙে দিয়েছে। এখন শিক্ষার্থীদের দাবি এবং প্রশাসনের পদক্ষেপই নির্ধারণ করবে এই নির্বাচনকে ঘিরে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কেমন হবে।