ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মামুনের মন্তব্য: ইডেন কলেজের ছাত্রীরা অক্সফোর্ডের কলেজিয়েট মডেল বোঝেন না
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রীরা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজিয়েট মডেল সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেন না।
তিনি জানান, অক্সফোর্ডে ‘কলেজ’ শুধু আবাসিক হল নয়—বরং প্রতিটি কলেজের রয়েছে নিজস্ব প্রশাসন, অর্থায়ন, লাইব্রেরি, টিউটোরিয়াল ব্যবস্থা, ছাত্রাবাস ও সামাজিক জীবন। শিক্ষার্থীরা ছোট দলের টিউটোরিয়ালে অংশ নেয় এবং ব্যক্তিগত একাডেমিক পরামর্শ পায়। এই মডেল দক্ষিণ এশিয়ার লেকচারনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
অধ্যাপক মামুন বলেন, ৭ কলেজ যদি অক্সফোর্ড মডেল অনুসরণ করে তবে এগুলো কেবল আবাসিক হলের মতো হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একসময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো কারণ এখানকার হলগুলো কলেজীয় ধাঁচে পরিচালিত হতো। তবে সময়ের সঙ্গে আমরা সেই মডেল থেকে দূরে সরে গেছি।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, হয়তো শিক্ষার্থীরা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজিয়েট মডেলকে বোঝাতে চাইছে। এই মডেলে কিংস কলেজ, ইম্পেরিয়াল কলেজ, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান প্রায় স্বায়ত্তশাসিতভাবে চলে এবং নিজস্ব ভর্তি, বিভাগ ও ক্যাম্পাস পরিচালনা করে। অন্যদিকে, ডিগ্রি প্রদান ও মান নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্ববিদ্যালয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও একই মডেল অনুসরণ করেছিল।
আরও পড়ুন: ৪৫তম বিসিএস ৮ম পর্যায় মৌখিক পরীক্ষা – নতুন তারিখ ঘোষণা
তার মতে, যে মডেলই গ্রহণ করা হোক না কেন, বর্তমান ভর্তি সংখ্যা বজায় রেখে শুধু সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যবস্থা চালু থাকলে প্রকৃত উচ্চশিক্ষা সম্ভব নয়। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও শিক্ষকের মানোন্নয়ন অপরিহার্য।
অধ্যাপক মামুন জোর দিয়ে বলেন, দেশের প্রধান সংকট বেকারত্ব। এ সমস্যা সমাধানে কারিগরি শিক্ষার প্রসার, মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনার বিকল্প নেই। মোট শিক্ষার্থীর অন্তত ৬৫ শতাংশকে কারিগরি শিক্ষায় যুক্ত করতে হবে। নইলে আন্দোলন ও দাবি থাকলেও শিক্ষার মান উন্নত হবে না।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ’s)
অক্সফোর্ডের কলেজিয়েট মডেল কী?
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজিয়েট মডেল হলো এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে প্রতিটি কলেজের আলাদা প্রশাসন, অর্থায়ন, লাইব্রেরি, ছাত্রাবাস ও সামাজিক জীবন থাকে, তবে পড়াশোনার বিষয়ভিত্তিক বিভাগগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কেন্দ্রীভূত থাকে।
অক্সফোর্ডের কলেজ ও বাংলাদেশের কলেজের মধ্যে পার্থক্য কী?
বাংলাদেশের কলেজগুলো মূলত পড়াশোনার কেন্দ্র, কিন্তু অক্সফোর্ডের কলেজগুলো শুধুমাত্র একাডেমিক নয়—আবাসন, টিউটোরিয়াল ক্লাস, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউটোরিয়াল পদ্ধতি কীভাবে কাজ করে?
অক্সফোর্ডে শিক্ষার্থীরা ছোট দলে বা একান্তভাবে শিক্ষকদের কাছ থেকে টিউটোরিয়াল ক্লাস পায়, যা দক্ষিণ এশিয়ার লেকচার-নির্ভর শিক্ষার তুলনায় অনেক বেশি ব্যক্তিগত ও কার্যকর।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা কেন অক্সফোর্ড মডেল অনুসরণের দাবি করছে?
তাদের ধারণা, অক্সফোর্ড মডেল অনুসরণ করলে কলেজগুলোর মর্যাদা বাড়বে, তবে তারা এর প্রকৃত রূপ সম্পর্কে পুরোপুরি জানে না।
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজিয়েট মডেল কীভাবে ভিন্ন?
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলো প্রায় স্বায়ত্তশাসিত, নিজস্ব ভর্তি প্রক্রিয়া, বিভাগ ও ক্যাম্পাস পরিচালনা করে। বিশ্ববিদ্যালয় মূলত ডিগ্রি ও মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কোন মডেল অনুসরণ করেছে?
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজিয়েট মডেল অনুসরণ করেছিল, যেখানে প্রতিটি কলেজ ছিল অনেক বেশি স্বশাসিত।
৮. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একসময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো কেন?
কারণ এর আবাসিক হলগুলো একেকটি কলেজের মতোই পরিচালিত হতো, যা অক্সফোর্ডের কলেজিয়েট ব্যবস্থার সাথে মিল রাখত।
উপসংহার
অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুনের মন্তব্য ঘিরে স্পষ্ট হয় যে, অক্সফোর্ডের কলেজিয়েট মডেল কেবল নামের কলেজ নয়, বরং পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে আবাসন, টিউটোরিয়াল ক্লাস, গবেষণা ও সামাজিক জীবনের সমন্বয় থাকে। ইডেন কলেজসহ সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা যদি এই মডেল সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতেন, তবে হয়তো তাদের দাবি ভিন্ন হতো। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের বেকারত্ব সমস্যা সমাধানে শুধু সংখ্যার বৃদ্ধি নয়, বরং মানসম্মত শিক্ষা, কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং দক্ষ শিক্ষক নিয়োগই হতে পারে মূল সমাধান।